
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেন্ডার বাণিজ্যকে ঘিরে শুধু দুর্নীতির অভিযোগই নয়, এর আড়ালে রয়েছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন ডাক্তারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বর্তমানে দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন ডা. মাসুম হাসান এবং অপরটির নেতৃত্বে ডা. মিনহাজুর রহমান তারেক।
জানা গেছে, কুমিল্লা জেলা ও মহানগর ড্যাবের শীর্ষ নেতৃত্ব ডা. মাসুম হাসানের অনুসারী হলেও মেডিকেল কলেজ ড্যাবের নেতৃত্বে আছেন ডা. তারেকের ঘনিষ্ঠরা। দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল।
গত ৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ড্যাব কেন্দ্রীয় নির্বাচনে ডা. হারুন-ডা. শাকিল পূর্ণ প্যানেলে জয়লাভ করলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়। একইসাথে কুমিল্লা ড্যাবের তিনটি সাব-কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এই সাংগঠনিক পদগুলোকে ঘিরে দুই চিকিৎসক নেতার অনুসারীরা নীরব যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন।
এ সময় মহানগর শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. আরিফ হায়দার নিজ গ্রুপ ছেড়ে ডা. তারেকপন্থীদের সাথে যোগ দেন। এই সুযোগ কাজে লাগায় মেডিকেল কলেজ ড্যাবের শীর্ষ নেতৃত্ব। সাংগঠনিক নীতি বহির্ভূতভাবে তারা প্রতিবাদ সভার আড়ালে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এবং ডা. আরিফ হায়দারের বক্তব্যের মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এতে দুটি সুবিধা হয়েছে। প্রথমত, ডা. মাসুম হাসানের অনুসারী হয়েও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা অধিকতর যুক্তিযুক্ত মনে হবে। দ্বিতীয়ত, জেলা ও মহানগর ড্যাবের কমিটি স্থগিত হলে মেডিকেল কলেজ ড্যাবের কমিটি চিকিৎসকদের নেতৃত্ব দিতে পারবে এবং ভবিষ্যতে বিভাগীয় ড্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ডা. মাসুম হাসানকে ছিটকে দেওয়া সহজ হবে।
তবে কেন্দ্রীয় ড্যাব নেতৃবৃন্দ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। মেডিকেল কলেজ নেতাদের অসাংগঠনিক আচরণের কারণে তিনটি কমিটি স্থগিত করে ডা. আবুল কেনানের নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। এই দল তাদের নেতৃত্বের দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করবে।
অন্যদিকে ডা. মিনহাজুর রহমান তারেকের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তিনি সরকারি কর্মকর্তা হয়েও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে আর্থিক নেগোসিয়েশন করতেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক পক্ষ। এ ধরনের একটি ঘটনার প্রমাণও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এছাড়া ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়োজিত ‘গণথাব্রানো কর্মসূচি’ ও একইদিনে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে ডা. আরিফ হায়দারকে উস্কে দেওয়ার পেছনেও তাঁর সম্পৃক্ততার অভিযোগ করছে স্থানীয় কর্মীরা।
ড্যাবের স্থানীয় চিকিৎসকরা আশা করছেন, অচিরেই তদন্তের মাধ্যমে সত্য উন্মোচিত হবে এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চলমান উত্তেজনার প্রশমন ঘটবে।