জনদূর্ভোগ ও যানজট কমাতে উত্তরা বিএনএস সেন্টার থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে একটি উড়ালসেতু, যার কাজ এখনো চলমান। তবে বহুল প্রতীক্ষিত সেই উড়ালসেতু চালু হওয়ার ২ বছর কাটতে না কাটতেই, এ যেন সড়কের আতংক ও জনমানুষের দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছে। হাউজবিল্ডিং, টঙ্গী, আব্দুল্লাহপুরগামী যাত্রীদের চলাচলে অসুবিধা এবং ফ্লাইওভার থেকে উঠা-নামার পথে রয়েছে ছিনতাই আতংক।
২০২২ সালে ৬ নভেম্বর প্রথমবারের মতো স্বল্পমাত্রায় চালু করা হয় উত্তরা থেকে টঙ্গী স্টেশনরোডগামী ফ্লাইওভারটি। প্রথম অবস্থায় মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও পরবর্তীতে বাস, ট্রাক ইত্যাদি চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। তবে তখনও পর্যন্ত হাউজবিল্ডিং, আব্দুল্লাহপুর এবং টঙ্গী বাজারে বাস স্টপেজ ও দূরপাল্লার বাসের কাউন্টার থাকার কারণে বেশির ভাগ যাত্রীবাহী বাস উড়ালসেতুর নিচে তৈরি স্বল্পমেয়াদের বেইলী ব্রীজ দিয়ে চলাচল করতো। গত ২ বছরে প্রকল্প কাজের ধীরগতি ও বেইলী ব্রীজের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এর অভাবে বাসসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন ফ্লাইওভার ব্যবহারের দিকে ঝুঁকতে থাকে। ২০২৪ সালের ২১ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে গাজীপুরমূখী বেইলী ব্রীজটি ভেঙ্গে মালবাহী ট্রাক তুরাগ নদীতে পরে যাওয়ার মতো দূর্ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে সকল যানবাহন পুরোদমে ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল শুরু করে। এতে করে যানজটের কিছুটা অবসান ঘটলেও দেখা দেয় অন্য বিপত্তি। টঙ্গী, আব্দল্লাহপুরের যাত্রীদের বাস সার্ভিস ব্যবহার করতে ফ্লাইওভারের সুউচ্চ ঢাল বেয়ে উঠা নামা করতে হয়, তার সাথে এসব উঠানামার পথে ঘাপটি মেরে বসে থাকে ছিনতাইকারীচক্র। যাদের আক্রমণে আহত হয় অনেক পথচারী, হারায় সর্বস্ব।
ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী পথচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাসে উঠতে হলে প্রথমে অনেকটা পথ হেঁটে ফ্লাইওভারে উঠার বিষয়টি রোজকার দিনের এক চরম বিড়ম্বনা হয়ে দাড়িয়েছে। শারীরিক কষ্টের সাথে সাথে নষ্ট হচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসময়ও। অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী যাত্রীরা পড়েছেন রীতিমতো ভোগান্তিতে। দূরপাল্লার যাত্রীদের ভারী ব্যাগ নিয়ে উঠানামাও ভোগান্তির আরেক চরম রুপ। এছাড়াও বয়স্ক ও অসুস্থ্য ব্যক্তিদের জন্য এ যেন এক আকাশ্চুম্বী দূর্ভোগ। পথচারীরা ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে গেলেও অনিয়মিত প্রকল্পের কাজ ও ভাঙ্গাচোরা রাস্তা তাদের জন্য ডেকে আনে বিপত্তি।
অন্যদিকে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফ্লাইওভার ঢাল অভীমুখে যাতায়াতের পথে ওত পেতে থাকা ছিনতাইকারীরা। আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গীর কিশোর গ্যাংগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে এসব ছিনতাইকর্মে। দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে চলছে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি। ধারালো অস্ত্রের সামনে অসহায় হয়ে পথচারীরা দিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে তাদের সাথে থাকা মূল্যবান সামগ্রী। ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি জানান, কিশোর বয়সী কিছু ছেলে ধারালো ছুরি সামনে রেখে তাকে ঘিরে ধরলে প্রাণের মায়ায় সাথে থাকা মোবাইল, টাকা ছিনতাইকারীদের দিয়ে জীবন বাঁচান। আশে পাশে বেশি মানুষের উপস্থিতি না থাকায় এবং কোন প্রকারের রোড লাইট না থাকায় এমন ঘটনা যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়াও অন্য পথচারীদের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রতিনিয়ত কম বেশি সবাই এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন এবং আতংকিত হয়েই চলাফেরা করছেন।
এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্র জানান, বাস যোগে শিক্ষা সফর থেকে ফেরার সময় ভোরে তাকে ফ্লাইওভারের টঙ্গী ঢাল অভিমূখে নামিয়ে দেয়। ঢাল বেয়ে নামার সময় ৪ থেকে ৫ জন ছিনতাইকারী তাকে চেপে ধরে মোবাইল ও টাকা দাবি করে। তার কাছে তেমন কিছু না থাকায় ছিনতাইকারীদের হাত থেকে মুক্তি পেলেও ধস্তাধস্তিতে আহত হন তিনি। এমন অভিযোগ আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গী অঞ্চলের কম বেশি সবারই। রাতের আধারে ছিনতাইয়ের প্রকোপ যেন আরো বহুগুনে বেড়ে যায়। বৈদ্যুতিক বাতির অভাবে সম্পূর্ণ রাস্তা অন্ধকার হয়ে থাকলে ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের জন্য রাতের বেলা হয়ে উঠে অপকর্ম পরিচালনার জন্য উত্তম পরিবেশ। জনসাধারনের ভাষ্যমতে, বহুল প্রতিক্ষীত এই ফ্লাইওভারটি তাদের সুবিধার চেয়ে অসুবিধার কারণই বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভূক্তভোগীদের দাবি অতিসত্বর যেন গুরুত্বের সাথে প্রকল্পের কাজটি শেষ করা হয়, বৈদ্যুতিক বাতি বসানো হয় এবং সেই সাথে এই পথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন অনতিবিলম্বে জোরদার করা হয়। এ অবস্থায় সুবিধার থেকে অসুবিধার পাল্লা যখন ভারী হয়ে যায় তখন মানুষের ভোগান্তি আকাশচুম্বীর পরিবর্তে উড়ালসেতুচুম্বী হয়ে দাঁড়ায়। নিরাপদ জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান চান পথচারীরা ও এ অঞ্চলের বাসিন্দারা।
© www.newsnewstbd.com
নিউজনেস্ট