
বরিশালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিস্ফোরক ও হত্যা মামলার আসামি বরিশাল সদর উপজেলাধীন টুঙ্গীবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাদিরা রহমান (৬২) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, বিদেশে পালানোর সময় বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ।
গত বুধবার (২৮ মে) বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নাদিরা রহমান বরিশাল সদর উপজেলাধীন টুঙ্গীবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি সাবেক সচিব ও এনার্জি রেগুলেটর কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুর রব খান ওরফে এ আর খানের স্ত্রী। তার পিতার নাম শেখ আব্দুর রহমান, মাতার নাম আঁখি রহমান। তার পৈতৃক নিবাস খুলনা বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোটা অংকের অর্থ ও আধিপত্যের মাধ্যমে বনে গেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। সিংহেরকাঠী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনবিহীন সভাপতি পদ ছিল তারই দখলে, তখন দায়িত্ব পালনকালে বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্ধকৃত অর্থ আত্মসাৎ, চেয়ারম্যান হওয়ার পরে এলাকাসহ ইউনিয়নে দখলবাজি, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ এমনকি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডেও ভূমিকা রেখেছেন বরাবরই। লঞ্চঘাটে চাঁদাবাজি, তরমুজ ঘাটে চাঁদাবাজি, টাকা খেয়ে বিচার-সালিশী, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হয়রানি করতেন নিয়মিত; উক্ত এলাকায় তিনি গ্যাং পরিচালনা করতেন বলেও জানা গেছে, কেউ তার বিরুদ্ধে গেলে তাদের হুমকি-ধমকিসহ প্রহার করা হতো।
ভূক্তভোগী এক পরিবার জানায়, এ আর খানের স্ত্রী আমার ছেলের জীবনটাকে শেষ করে দিছে। আমার ছেলের কোন অপরাধ ছিল না, তিনি জোড় করে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে তার কাজের মেয়েকে দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন। এমনিভাবে শুধু আমার ছেলেই না বরং অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এই সন্ত্রাসী মহিলা। নিজে সংসার ভেঙে এসেছে আমাদের গ্রামে, এখন অন্যদের সংসারও ভাঙতেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ আর খান সচিব থাকাকালীন ব্যাপক দূর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। আর সম্পদগুলো মূলত এই নাদিরা রহমানের নামেই। পরবর্তীতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান থাকাকালীন অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যসহ ব্যাপক দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এ আর খানের বিরুদ্ধে।
অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, এ আর খান জীবত থাকাকালীন তার নামে দুদকে কয়েকটি মামলা রয়েছে এবং তন্মধ্যে তার স্ত্রী ইউপি চেয়ারম্যান নাদিরা রহমানের নামও রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বুধবার ঢাকায় ইমিগ্রেশন পুলিশ আটকের পর বরিশালের কোতয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করে তাকে।
কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিস্ফোরক ও হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বরিশাল আদালতে হাজির করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এছাড়াও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানায় তার নামে চুরি ও বাড়িঘর ভাংচুরের মামলাও রয়েছে।