
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলমান অপপ্রচারে এক নারী উদ্যোক্তা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিগত পাঁচ বছর ধরে এক ভদ্রমহিলার দ্বারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি।
ভুক্তভোগী ওই উদ্যোক্তা জানান, “আমি খুলনার মেয়ে, কুমিল্লায় এসে কাজ করছি। কিন্তু আমাকে নিয়ে নানা অপপ্রচার চলছে— বলা হচ্ছে আমি হেতি, তেতি, বেটি, কুমিল্লায় এসে রাজত্ব করছি। এসব মিথ্যা কথায় আমি মানহানির শিকার হচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ২০২১ সালে থানায় অভিযোগ করেছিলাম। থানা থেকে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়, কিছুদিন শান্তিও পাই। কিন্তু কিছুদিন পর আবার শুরু হয় সেই অপপ্রচার। পরে আমি নিজেই ভাবলাম, ওদের সঙ্গে বসে কথা বলি, ভুল বোঝাবুঝি মেটাই। তখন তারা হাসিমুখে আপ্যায়ন করে, সেলফি তোলে, লাইভ করে—কিন্তু কিছুদিন পরই আবার শুরু হয় আগের মতো হয়রানি।”
২০২৪ সালে আবারও ওই নারীর নামে থানায় অভিযোগ করেন তিনি। অভিযোগটি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
“প্রায় ২০ দিন আগে আবার থানায় যাই। কারণ, এবার ওই নারী একা নয়, আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে দলবদ্ধভাবে আমার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার শুরু করেছে,” বলেন ভুক্তভোগী।
তিনি জানান, থানায় কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞেস করেন তিনি কী চান? উত্তরে তিনি বলেন, “আমি শান্তি ও সমাধান চাই।”
থানায় মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি রাজি হন, কিন্তু অপর পক্ষ মিউচুয়াল সমাধান চাননি। পরবর্তীতে থানায় লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে, তারা আর তার বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লিখবেন না। থানা থেকেও তাকে একটি কাগজ দেওয়া হয়—যদি কেউ আবার তার বিরুদ্ধে লেখে, তাহলে কোর্টে সেই কাগজ দেখিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
কিন্তু তিনদিনের মাথায় আবারও শুরু হয় অপপ্রচার।
ওই নারী উদ্যোক্তা বলেন, “আমি একজন নারী হিসেবে যদি আরেক নারীকে হেনস্তা করি, তাহলে আমার উদ্যোক্তা পরিচয় ধারণের কোনো মানে হয় না। তাই আমি চুপ থাকি।”
সম্প্রতি চলমান হয়রানির মধ্যে একদিন তিনি ফেসবুকে একটি “হ্যান্ডকাফ” নিয়ে ফানি পোস্ট করেন। বিষয়টি নিয়ে কিছু সাংবাদিক তার কাছে জেরা করেন এবং অভিযোগ করেন—নিউজ না করার জন্য তাকে টাকা দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়।
“আসলে আমি ভয়ে সেই ফানি পোস্টটি দিয়েছিলাম, যদিও সেটা আমার ভুল ছিল,” স্বীকার করেন তিনি।
সবশেষে তিনি বলেন, “আমরা ঘরে হয়তো স্বামীর কাছ থেকে স্বাধীনতা পাই, কিন্তু বাইরে কাজ করতে গেলে এখনো সমাজ আমাদের সেই স্বাধীনতা দিতে প্রস্তুত নয়।” থানা থেকে আসার পরে ওরা মানুষের মাধ্যমে বলছে আমি কাজ ছেড়ে দিলে এবং কুমিল্লা ছেড়ে দিলে ওরা আর আমাকে ডিস্টার্ব করবে না। তখন আমি উত্তরটা দিয়েছিলাম আমি কাজও ছাড়বো না কুমিল্লা ও ছাড়বো না, তোমরা যা পারো করো।
নারী উদ্যোক্তারা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়রানি এখন একটি নিত্যদিনের ঘটনা, যার শিকার হচ্ছেন কর্মজীবী নারীরা বেশি। এই বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আরও কার্যকর ভূমিকা কামনা করেছেন তারা।