মঙ্গলবার , ৪ মার্চ ২০২৫ | ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মধ্যরাতে সাতকানিয়ায় দুই ‘জামায়াত ক্যাডার’ গণপিটুনিতে নিহত

অনলাইন ডেস্ক :
মার্চ ৪, ২০২৫ ৩:৫৮ পূর্বাহ্ণ
পঠিত: ১০৩ বার

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়ায় ক্ষুব্ধ জনতা দুজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। গুলিবিদ্ধ অপর পাঁচজনের মধ্যে অন্তত দুজনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। দলীয় পদবি না থাকলেও নিহত দুজনই এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর ‘নেতা’ হিসেবে পরিচিত। ঘটনার সময় অস্ত্রধারীরা প্রায় শতাধিক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। এতে অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

সোমবার (৩ মার্চ) রাত ১০টার দিকে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা ১ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত দুজন ছাড়াও গুলিবিদ্ধ পাঁচজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে অবশ্য তাদের চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

গণপিটুনিতে নিহত দুজন হলেন—নেজাম উদ্দিন ও আবু সালেহ। জামায়াত ক্যাডার হিসেবে পরিচিত দুজনেরই বয়স প্রায় ৩৫ বছর হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একটি ছবিতে দেখা যায়, নিহত নেজামের লাশের পাশে পড়ে থাকা ব্যবহৃত রিভলবারটির পুরো ম্যাগাজিন খালি হয়ে গেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর থেকে এলাকায় নেজাম ও তার সহযোগীরা ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, তারাবি নামাজের পর রাত ৯টার দিকে অন্তত ২০ জন অস্ত্রধারী সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় জামায়াত নেতা নেজাম উদ্দিন এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় যান। মোট নয়টি সিএনজিচালিত ট্যাক্সি ও একটি মোটরসাইকেলে করে তারা সেখানে যান। গাড়িগুলো থেকে নেমে হেঁটে অস্ত্রধারীদের দলটি কাছের একটি জায়গায় অবস্থান নেয়। এলাকাবাসী তাদের তৎপরতা টের পাওয়ার পর স্থানীয় মসজিদ থেকে মাইকে ‘ডাকাত আসছে ডাকাত আসছে’ বলে ঘোষণা দেওয়া হয় বারবার। এর একপর্যায়ে স্থানীয় এলাকাবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে নেজাম ও তার সহযোগীদের ঘিরে ফেলে। এ সময় নেজামের সহযোগীরা জনতাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। এভাবে প্রায় আধঘন্টা ধরে গোলাগুলি চলতে থাকে। স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সময় শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। এ সময় পুরো ছনখোলা এলাকায় অবর্ণনীয় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপরও অবস্থা বেগতিক দেখে নেজাম ও তার সহযোগীরা অদূরে রাখা তাদের গাড়িগুলোর দিকে এগোতে থাকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যেই আরও শক্তি সঞ্চয় করে অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ এলাকাবাসী লাঠিসোটা ও দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে নেজাম ও তার সহযোগী আবু সালেহসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। ক্ষুব্ধ জনতার মারধরে নেজাম ও আবু সালেহ ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় আরও অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হলেও ইকবাল ও ওবায়দুল হক নামের দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এছাড়া আহত আরও যে তিনজনের নাম জানা গেছে, তারা হলেন আব্বাস উদ্দিন, মামুনুর রশিদ ও নাসির উদ্দিন। তাদের কারও বুকে, কারও হাতে আবার কারও পায়েও গুলি লেগেছে বলে জানা গেছে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে তাদের পাঁচলাইশ এলাকার পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অন্যদিকে ক্ষুব্ধ জনতার রোষ এড়িয়ে নেজামের সহযোগী সন্ত্রাসী জামশেদসহ অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।

ঘটনার অনেক পরে সেনাবাহিনীর স্থানীয় একটি টিম ও সাতকানিয়া থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায় বলে জানা গেছে। আরও পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস ছাড়াও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা নেজাম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা এলাকায় ফিরে আসেন। এরপর থেকে নেজাম ও তার বাহিনীর চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসে কাঞ্চনা, এওচিয়া, চরতী, আমিলাইশসহ আশেপাশের এলাকাবাসী অতিষ্ট ছিল। তারা চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারী হওয়ায় পুলিশও তাদের সমীহ করে চলতো বলে অনেকের অভিযোগ।

নেপথ্যে নয় বছর আগের ঘটনা

২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ২৫ মামলার আসামি তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আবুল বশর ওরফে বদাইয়া (৪০) নিহত হন। এলাকায় তিনি জামায়াতের ‘ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তাকে নিয়ে ‘অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে’ যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করে পুলিশ। তবে বশরের সহযোগীরা হত্যার এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও এওচিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের হাত রয়েছে বলে দাবি করে আসছিল। কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনার বাসিন্দা বশরকে বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের হাজীগাঁও গ্রাম থেকে ধরে এনে সাতকানিয়ার ছনখোলা গ্রামের চার টেইঙ্গা বটতল এলাকায় পাহাড়ের পাশে ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়া হয়। তিনি সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল কবীর হত্যা মামলারও এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আবুল বশর ওরফে বদাইয়ার প্রধান সহযোগী ছিলেন নেজাম উদ্দিন। বশরকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার পর নেজাম পালিয়ে সৌদি আরব চলে যান। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর নেজাম এলাকায় ফিরে আসেন। বশর ‘হত্যা’র শোধ নিতে এরপর থেকে তিনি ও তার সহযোগীরা এওচিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের ঘরবাড়ি-খামারসহ বিভিন্ন স্থাপনায় লুটপাট চালান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পর পলাতক থাকা মানিক চেয়ারম্যানের একটি অফিসে গত শুক্রবারও হামলা চালানো হয় বলে স্থানীয়রা জানান। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর নজরুল ইসলাম মানিকের স্ত্রী রুনা আকতারের দেওয়া এক অভিযোগ থেকে জানা যায়, নেজাম ও তার সহযোগী ইকবাল ও ফারুকের নেতৃত্বে জামায়াত ক্যাডার হিসেবে পরিচিত অন্তত ৫০ জন সন্ত্রাসী গত বছরের ডিসেম্বরের শুরু থেকে টানা ১৫ দিন ধরে নজরুল ইসলাম মানিকের খামার থেকে ৫০-৬০ ট্রাক ভর্তি করে মাছ তুলে নিয়ে যায়। ১৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ৩০-৩৫টি ট্রাক নিয়ে এসে মানিকের মালিকানাধীন কেবিএম ব্রিকফিল্ড থেকেও ২ কোটি টাকার ইট নিয়ে যায়। সর্বশেষ সোমবারও (৩ মার্চ) মানিক চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের খোঁজে নেজাম উদ্দিন কাঞ্চনা ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

এলাকায় এলাকায় ক্যাডারবাহিনী
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পরপরই কাঞ্চনা এলাকা নেজাম উদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। মধ্যম কাঞ্চনা যায় রিফাতের হাতে। অন্যদিকে এওচিয়া এলাকা ভাগ করে নেন আবু তাহের আদাইয়া, জাহেদ ও ফরহাদ। এদের সকলেই ‘জামায়াত ক্যাডার’ হলেও নিজেদের মধ্যেও গত কয়েক মাস ধরে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।

সর্বশেষ - CPC 2

আপনার জন্য নির্বাচিত

খিলক্ষেতে ধর্ষণের অভিযোগে তরুণকে গণপিটুনি, পুলিশের ওপর হামলা

সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা আবদুল্লাহ আল মামুন

কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নাশকতা মামলার আসামী গ্রেফতার দুই

কুমিল্লা সদর দক্ষিণে লাল দীঘির পাড় এলাকায় যোথবাহীনির অভিযানে ৩ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

কুমিল্লা সদর দক্ষিণে অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীদের বেজায় ক্ষমতার প্রভাব, সিরিজ রিপোর্ট ০১

ব্রাক্ষণবাড়িয়া ১২০ কেজি গাঁজাসহ আটক ০৩, পলাতক ০২

বিদেশ যাওয়ার আগে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া

মার্ডার আসামির রিমান্ড বাতিল করে দিতে চাওয়া ভুয়া এসআই গ্রেপ্তার

ব্রাহ্মণপাড়ায় ৩০০ বোতল স্কাফ সিরাপ ও ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক ০১।

জামায়াতে ইসলামী বিজয়পুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন