
জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি)-র মুখপাত্র হাসনাত আব্দুল্লাহর সাম্প্রতিক এক বক্তব্য ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কুমিল্লা বিভাগ। সোমবার বিকেলে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির বিভাগীয় নেতারা তার বক্তব্যকে ‘শিশুসুলভ’, ‘রাজনৈতিক অপরিপক্বতার বহিঃপ্রকাশ’ এবং ‘মানসিক ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ’ হিসেবে আখ্যা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, “সম্প্রতি হাসনাত আব্দুল্লাহ একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘কুমিল্লার বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের টাকায় রাজনীতি করে।’ এ ধরনের বক্তব্য শুধু মিথ্যাচার নয়, এটি একটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিভ্রান্তিকর উক্তি। এটি আমাদের নেতাকর্মীদের ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে।”
সেলিম ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, রাজনীতিতে অপরিপক্বতার কারণে হাসনাত আব্দুল্লাহ এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “তার মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন। একজন দলীয় মুখপাত্র হিসেবে তার এ ধরনের বক্তব্য শুধু লজ্জাজনক নয়, রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট করার অপচেষ্টা বলেও আমরা মনে করি।”
বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি কিংস পার্টি নামে পরিচিত এনসিপির মুখপাত্র হয়ে এমন দায়িত্বহীন ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন, তার রাজনৈতিক অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে এ ধরনের ছেলেমানুষী, অপরিপক্ক রাজনীতিবিদদের মাঠ থেকে সরিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা।”
সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও বিএনপির অবদান তুলে ধরে সেলিম ভূঁইয়া বলেন, “কুমিল্লা জেলা বিএনপির দূর্গ হিসেবে পরিচিত। এই জেলার নেতারা অতীতে দলীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম. কে আনোয়ার, কর্নেল আকবর হোসেন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার মতো নেতারা কুমিল্লা থেকে উঠে এসেছেন। দেশের বিভিন্ন সংকটে কুমিল্লার বিএনপি নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে কুমিল্লায় বিএনপি যে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, তা ঐতিহাসিক। এই আন্দোলনে আমাদের নেতাকর্মীরা শহীদ হয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন, কিন্তু পিছপা হননি। সেই বিপ্লব ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের লক্ষ্যে জনগণকে জাগিয়ে তোলে।”
হাসনাত আব্দুল্লাহকে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়ে সেলিম ভূঁইয়া বলেন, “তাকে আমাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। যদি তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন ও ক্ষমা না চান, তাহলে কুমিল্লায় তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা তাকে এই সুযোগ দিচ্ছি, কিন্তু সময়সীমা অতিক্রান্ত হলে কুমিল্লার রাজপথে তার জায়গা থাকবে না।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে বিএনপি নেতা বলেন, “সরকার যতই নির্বাচনকে বিলম্বিত করুক না কেন, দেশের জনগণ ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। আমরা সেই দাবিতেই আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান সার্বক্ষণিকভাবে আন্দোলনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপি তাঁর নির্দেশে আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় রয়েছে এবং থাকবে।”
এসময় সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়ার সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান আমীর, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবুসহ কুমিল্লা মহানগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই হাসনাত আব্দুল্লাহর মন্তব্যের প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান এবং কুমিল্লা বিএনপির ভাবমূর্তি রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত জুলাই সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যের হাসাদ আব্দুল্লাহ বলেন “কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের রাজনীতি আওয়ামী লীগের টাকায় চলে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া। আওয়ামী লীগের সকল অর্থ বাজেয়াপ্ত করা।”